বিভিন্ন কারণে নামিদামি অনেকেই বাদ
অনলাইন ডেস্ক: ঋণ খেলাপি, আদালতে দণ্ডা, তথ্য প্রদানে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বাদ পড়ছেন ৭৮৬ জন। এদের মধ্যে নামিদামি অনেক প্রার্থীও রয়েছেন। ৩০০ আসনে নির্বাচনে বৈধ মনোনয়নপত্র ঘোষণা করা হয়েছে ২ হাজার ২৭৯টি। রোববার দেশের সব আসনে বাছাই শেষে এ তথ্য জানান ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান। তবে ৩৯টি রাজনৈতিক দলভিত্তিক মনোনয়নপত্র বাতিলের তথ্য দিতে পারেনি ইসি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন দলের হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়নি।
সূত্র মতে, বাদ পড়াদের তালিকায় আছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, এম মোর্শেদ খান, আমানউল্লাহ আমান, আসলাম চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আফরোজা আব্বাস, আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার, সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী গোলাম মাওলা রনি ও গণফোরামে যোগদানকারী রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আপিলের ওপর শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর।
নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান জানান, নির্বাচন কমিশন যদি আপিল বাতিল করে, তবে ওই প্রার্থী আদালতেও যেতে পারবেন।
বিভাগওয়ারি আসন-দাখিল মনোনয়নপত্রের সংখ্যা-বাছাইয়ে বাতিল-বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা হচ্ছে, রংপুরের ৩৩ আসনে ৩৫৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাদ পড়েছে ৯১টি, বৈধ হয়েছে ২৬২টি; রাজশাহী ৩৯ আসনে ৩৫৫টির মধ্যে বাদ পড়েছে ৯৬টি, বৈধ হয়েছে ২৫৯ টি; খুলনা ৩৬ আসনে ৩৫১টির মধ্যে বাদ পড়েছে ৯০টি, বৈধ হয়েছে ২৬১টি; বরিশাল ২১ আসনে ১৮৩টির মধ্যে বাদ পড়েছে ৩৮টি, বৈধ হয়েছে ১৪৫ টি; ময়মনসিংহ ২৪ আসনে ২৩১টির মধ্যে বাদ পড়েছে ৬২টি, বৈধ হয়েছে ১৬৯ টি; ঢাকা ৭০ আসনে ৭৩১টির মধ্যে বাদ পড়েছে ১৯২টি, বৈধ হয়েছে ৫৩৯ টি; সিলেট ১৯ আসনে ১৮৪টির মধ্যে বাদ পড়েছে ৪৪টি, বৈধ হয়েছে ১৪০টি; চট্টগ্রাম ৫৮ আসনে ৬৭৭টির মধ্যে বাদ পড়েছে ১৭৩টি, বৈধ হয়েছে ৫০৪টি; সর্বমোট ৩০০ আসন ৩ হাজার ৬৫টি, ৭৮৬টি বাতিল এবং ২২৭৯টি বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্রমতে, খেলাপি ঋণ থাকার কারণে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) এবং টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। টাঙ্গাইলের জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম রোববার দুপুরে যাচাই-বাছাইয়ের পর এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
জানা গেছে, যাচাই-বাছাই চলার সময় কাদের সিদ্দিকীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা ঋণখেলাপির তালিকায় আছে বলে অগ্রণী ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম উদ্দিন রিটার্নিং অফিসারকে জানান। এ সময় কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চান রিটার্নিং অফিসার। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার বলার তেমন কিছু নেই, যা হয়েছে সব সরকারের ইচ্ছাতেই হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে আপিল করবেন।
ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব (জাপা) এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
এছাড়া হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম থাকায় রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় দ-প্রাপ্ত হওয়ায় ঢাকা-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
মামলার কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মো. হেলাল উদ্দিনের চট্টগ্রাম-৫ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির প্রার্থী এম মোর্শেদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় এম মোর্শেদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
ঋণ খেলাপির কারণে ঢাকা-৯ আসনে বিএনপি প্রার্থী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর আগে রিটার্নিং অফিসার ঋণ খেলাপি হিসেবে তার প্রার্থিতা স্থগিত করেন। তখন প্রার্থী ২ ঘণ্টা সময় চান। ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজম।
ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র ফরমে নিজ দলের নাম বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কোনোটিই উল্লেখ না থাকায় সাবেক মন্ত্রী ও বিএনএ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসার। তিনি চট্টগ্রাম-৪ আসনে দলের প্রার্থী ছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মামলা সংক্রান্ত সার্টিফাইড কপি না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং অফিসার।
নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দুটি মামলায় তার দণ্ডাদেশ থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বসতবাড়িতে আগুন লাগানো ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে নিম্ন আদালত দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করলেও আদালত সাজা বহাল রাখেন। এ কারণে রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত ভোটার তালিকায় গরমিল রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
যশোর-৩ (সদর) ও যশোর-৪ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন, কিন্তু এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র জমা দেননি, সে কারণে তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
কুড়িগ্রাম-৪ আসন (রাজিবপুর, রৌমারী ও চিলমারী উপজেলা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্পর্কিত তথ্যে ঘাটতি থাকায় তার মনোনয়নটি বাতিল করা হয়।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর না থাকায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
ঋণ খেলাপির অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের বর্তমান এমপি এবং জাকের পার্টির প্রার্থী এমএ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে আউয়ালের অভিযোগ, আমার ১২ ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার ঋণ ছিল। এ ঋণের ব্যাপারে হাইকোর্টে স্টে অর্ডার ছিল। হাইকোর্টের কাগজপত্র নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আসার পথে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার খানের সমর্থক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ কারণে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আমি এ বিষয়ে আপিল করব।
ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. তমিজ উদ্দিন ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি সুলতানা আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
ঋণ খেলাপির কারণে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। একই সঙ্গে দ-প্রাপ্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াস কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। দ-িত হওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী, ৩৫টি আসনে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। ২৬৫টি আসনে এক বা একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সর্বোচ্চ বাতিল হয়েছে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে; এখানে ১৩টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জমা পড়েছিল ২৩টি মনোনয়নপত্র।
যেসব আসনে ছয়টির বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে : ঢাকা-১৭ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি বাতিল হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনে ১৪টির মধ্যে ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ১৬টির মধ্যে ১০টি, কুমিল্লা-৩ আসনে ২৭টির মধ্যে ১০টি, বগুড়া-৭ আসনে ১৪টির মধ্যে সাতটি, রাজশাহী-১ আসনে ১২টি মধ্যে আটটি, যশোর-২ আসনে ১৫টির মধ্যে সাতটি, ময়মনসিংহ-৩ আসনে ১৭টির মধ্যে ১০টি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ১০টির মধ্যে সাতটি এবং ঢাকা-৮ আসনে ২২টির মধ্যে সাতটি বাতিল।
৩৫টি আসনে কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি : ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, জয়পুরহাট-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-২, নাটোর-৩, পাবনা-২ ও ৪, কুষ্টিয়া-৩, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, ৩, ৪, ৫, সাতক্ষীরা-৩, পটুয়াখালী-৪, ভোলা-৩, বরিশাল-৪ ও ৫, পিরোজপুর-২, টাঙ্গাইল-২, ৫, জামালপুর-২, নেত্রকোণা-৩, ঢাকা-১২ ও ১৩, নরসিংদী-৪, গোপালগঞ্জ-২, মৌলভীবাজার-৪, কুমিলা-৭, চাঁদপুর-৩, ফেনী-২, নোয়াখালী-৫, লক্ষ্মীপুর-৩ এবং কক্সবাজার-১।
কোন দলের কয়টি মনোনয়নপত্র এবং কজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে- এ সংক্রান্ত একীভূত তথ্য জানাতে ইসি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আজ এ তথ্য জানানো হতে পারে। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন, জাপা মহাসচিবসহ যে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসি। রাত ৯টার দিকে ইসি সচিব কমিশন সচিবালয় ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকদের জানান, রিটার্নিং অফিসার বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন; এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় ৯ প্রার্থী, ফেনীতে খালেদা জিয়াসহ সাতজন, ভোলায় তিনজন, সাতক্ষীরায় সাতজন, গোপালগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) পাঁচজন, কুড়িগ্রামে ১৯, কিশোরগঞ্জে ২১, ঝিনাইদহে ১৫, মেহেরপুরে ১০, টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর দুটিসহ ১৩, মানিকগঞ্জে আটজন, ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচজন, রাঙ্গামাটিতে দুইজন, রাজশাহীতে ২৩, কুমিল্লায় ৩৬, রামগঞ্জে দুই, বান্দরবা?নে ছয়জন, খুলনায় চারজন, ঝিনাইদহে ১৪, পিরোজপুরে তিনজন, বাগেরহাটে তিনজন, লালমনিরহাটে পাঁচজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঁচজন, ফরিদপুরে ২১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবর-
কুষ্টিয়া : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমদ, জাসদের (বাদল গ্রুপ) রেজাউল হক ও মুসলিম লীগের আবদুল খালেক সরকার, ২ আসনে স্বতন্ত্রের উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল গফুর ও বশির আহমদ, ৪ আসনে বর্তমান এমপি আবদুর রউফ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মেহেদী হাসান, জাকের পার্টির তসির উদ্দিন ও জাসদের রোকনুজ্জামান রোকন।
ফেনী : ফেনী-১ আসনে প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। খালেদা জিয়া ছাড়া আরও ছয়জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ভোলা : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর, ২ আসনে স্বতন্ত্রের হুমায়ুন কবির, ৪ আসনের জাপার এমএ মান্নান হাওলাদার।
সাতক্ষীরা : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে আওয়ামী লীগের বিএম নজরুল ইসলাম, বিশ্বজিত সাধু, স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মুজিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম এবং ন্যাপের মো. হায়দার আলী, ২ আসনে জেএসডির আফসার আলী এবং ৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান।
গোপালগঞ্জ : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামছুল আলম খান চৌধুরী, ৩ আসনে বিএনপি এসএম জিলানী ও জাপার এজেডএম অপু শেখ।
মাগুরা : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে গণফোরামের ডা. মিজানুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন এবং ২ আসনের বিএনপি প্রার্থী খন্দকার মেহেদী আল মাসুদ।
নবাবগঞ্জ (ঢাকা) : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ঢাকা-১ আসনে বিএনপির খোন্দকার আবু আশফাক ও ফাহিমা হোসাইন জুবলী এবং জাকের পার্টির মো. সামসুদ্দিন আহম্মেদ, জাসদের আইয়ুব খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন।
কুড়িগ্রাম : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী সফিকুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু সুফিয়ান, জাসদের সলিমুল্লাহ ছলি, বীরপ্রতীক আবদুল হাই সরকার, ৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী আবদুল খালেক, ৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকির হোসেন, জাকের পার্টির প্রার্থী শাহ আলম, গণফোরামের প্রার্থী মাহফুজার রহমান, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক ম-ল ও এড. জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির বিদ্রোহী ঈমান আলী ও শাসসুল হক মৌলভী, জাপার বিদ্রোহী অধ্যক্ষ ইউনুছ আলী, জামাতের আবুল হাসেম ও মোস্তাফিজুর রহমান, বাবুল খান ও আবিদ আলভী জ্যাপ।
কিশোরগঞ্জ : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে বিএনপির শরীফুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেএসডির অ্যাডভোকেট মুহ. আবদুর রহমান, জাপার মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, বিকল্প ধারার মোহাম্মদ ইউসুফ। ২ আসনে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, জাপার এরশাদ উদ্দিন, সিপিবির নূরুল ইসলাম, জেএসডির মো. লুৎফুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের মো. সালাউদ্দিন রুবেল, মুসলিম লীগের মীর আবু তৈয়ব মো. রেজাউল করিম, স্বতন্ত্রের আনিসুজ্জামান খোকন। ৩ আসনে বিএনপির সাইফুল ইসলাম সুমন, সিপিবির ডা. এনামুল হক, স্বতন্ত্রের মো. আম্মান খান, মো. মনিরুজ্জামান নয়ন ও ডক্টর মিজানুল হক। ৪ আসনে বিএনপির সুরঞ্জন ঘোষ। ৫ আসনে জাসদের সেলিনা সুলতানা। ৬ আসনে স্বতন্ত্রের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ মুছা খান।
ঝিনাইদহ : খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওহাবের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
মেহেরপুর : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে সাবেক এমপি প্রফেসর আবদুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান, বিএনপি নেতা আবদুুর রহমান, ২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম, গাংনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আহম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন।
টাঙ্গাইল : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে বিএনপির মাহাবুব আনাম স্বপন ফকির, ৩ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. চাঁন মিয়া ও বিএনএফের মো. আতাউর রহমান, ৪ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর দুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থী বাকির আলী ও আবুল কাশেম, ৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী নুর মোহাম্মদ খান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মামুনুর রহমান, ৭ আসনে খেলাফত মজলিসের মজিবুর রহমান, ৮ আসনে খেলাফত মজলিসের আবদুল লতিফ ও জাপার কাজী আশরাফ সিদ্দিকী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহীদুল ইসলাম।
মানিকগঞ্জ : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে বিএনপির তোজাম্মেল হক, জাকের পার্টির আতাউর রহমান। ২ আসনে বিএনপির মঈনুল ইসলাম খান ও আবিদুর রহমান রোমান, জাপার এসএম আবদুল মান্নান, স্বতন্ত্রের মোশারফ হোসেন ও মাসুম মিয়া, ৩ আসনে বিএনপির আতাউর রহমান আতা।
ঠাকুরগাঁও : যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ১ আসনে জাকের পার্টির আল মামুন, ৩ আসনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির শাফি আল আসাদ, বিকল্পধারার খলিলুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় ও আবদুল জলিল।