আনন্দমুখর পরিবেশে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন
২৫ ডিসেম্বর,বুধবার,ষ্টাফ রিপোর্টার,নিউজ একাত্তর ডট কম: পেরিয়ে আসা দীর্ঘ ছয় দশকের মতো আগামী দিনগুলিতেও সত্য, ন্যায় ও গণমুখী সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে পালিত হলো দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। অতিথিবৃন্দ শুভেচ্ছা জানাতে এসে প্রত্যাশা করলেন, ইত্তেফাক কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি, ভবিষ্যতেও সাংবাদিকতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঐতিহ্যের পথ ধরে তারুণ্যের উদ্দীপনায় এগিয়ে যেতে আরেকবার প্রেরণাদীপ্ত হলো মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এই দৈনিক। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ইত্তেফাক কার্যালয়সহ দেশের সব জেলায় উত্সবমুখর পরিবেশে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। গণমানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে সব আয়োজন ছিল প্রাণবন্ত। অগণিত পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত হলো ইত্তেফাক পরিবার। ৬৭ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে কাওরান বাজারের নিজস্ব ভবনে ইত্তেফাক অফিস ভরে উঠেছিল পত্রিকার শুভার্থী, বন্ধু ও বিজ্ঞাপনদাতাদের পদচারণায়। সকাল থেকে রাত অবধি ইত্তেফাক ভবনে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছেন মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইত্তেফাকের নিয়মিত লেখক, বিজ্ঞাপনদাতাসহ আরো অনেকে। দিনভর উত্সবমুখর পরিবেশে সবাই উদ্যাপন করেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি।
কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা
দুপুর সাড়ে ১২টায় কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এ সময় ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন অতিথিদের নিয়ে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের সূচনা করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানকে নিয়ে কেক কাটেন তারা। পরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে নিয়েও কেক কাটেন। এ সময় তথ্যমন্ত্রী ফুলের তোড়া ইত্তেফাক সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান।
এরপর সাবেক মন্ত্রী, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়েও কেক কাটেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও তাসমিমা হোসেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, জাতীয় পার্টি-জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি-জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আরো শুভেচ্ছা জানাতে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, লেবার পার্টির সভাপতি ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
অতিথিরা যা বললেন
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দৈনিক ইত্তেফাক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন-লালিত যে বাংলাদেশ, দৈনিক ইত্তেফাক সেই জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উত্সর্গ করেছিল। সেই পথ ছিল অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সত্ সাংবাদিকতা ছিল সেই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার মন্ত্র। সত্ সাংবাদিকতার সেই মন্ত্র ইত্তেফাক আজও হূদয়ে ধারণ করে চলেছে। আমার প্রত্যাশা, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সত্য, ন্যায় ও বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে ইত্তেফাকের অবস্থান প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো বদলায়নি। ইত্তেফাক সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে। বিগত কয়েক দশকের ধারাবাহিকতায় আগামীতেও ইত্তেফাক দিকনির্দেশনামূলক সংবাদ পরিবেশন করে যাবে এটাই প্রত্যশা।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দৈনিক ইত্তেফাক, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ৬ দফা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মানিক মিয়া ছিলেন একসূত্রে গাঁথা। ইত্তেফাক এখনো মানুষের মন জয় করে আছে, মানুষের হূদয়ে আছে। ইত্তেফাকে সংবাদের আলোচনা-সমালোচনা সবই আছে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, মানিক মিয়া এভিনিউ নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু তার অবদান আমরা মনে রেখেছি। ইত্তেফাক ৬৭ বছরে পা দিল। আশা করি, তারা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে পত্রিকাটিকে আরো সামনে এগিয়ে নেবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাকে স্মরণ করছি। আমরা ইত্তেফাক ও জাতিয়তাবাদী সংগ্রামকে আলাদা করে দেখিনি। ইত্তেফাক বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে, স্বাধীনতা আন্দোলনে যে ভূমিকা পালন করেছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, থাকবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ইত্তেফাকের সংবাদ খুব বস্তুনিষ্ঠ। এখন আমরা অনেক পত্রিকা পড়ি, কিন্তু খবরের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য আমি ইত্তেফাক পড়ি। ইত্তেফাকের ওপর আমরা আস্থা রাখি। অতীতের মতো এখনো দেশের স্বার্থে ইত্তেফাক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই পরিবেশন করে।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ইত্তেফাক জনগণের কথা বলে, সাধারণ মানুষের কথা বলে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও ইত্তেফাক সাধারণ মানুষের কথা বলবে।
সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ইত্তেফাক প্রাচীন পত্রিকা। ঐতিহাসিক সময়ে এর সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রেখেছিল ইত্তেফাক। ইত্তেফাকের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। তারপরেও ইত্তেফাক তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষের মনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ইত্তেফাক বেঁচে থাকবে চিরদিন।
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে যে সংবাদগুলো আসে তা বস্তুনিষ্ঠ আকারে এবং নির্ভরযোগ্য উপস্থাপন করে, সে জন্য আমরা বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইত্তেফাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ইত্তেফাকের জন্মই হয়েছিল, এদেশের মানুষকে শোষণ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কেবল একজন সম্পাদকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। জেপি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় এই মহান ব্যক্তিকে স্মরণ করে।
জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইত্তেফাক পাশে থেকেছে, ভবিষ্যতেও সবসময় পাশে থাকবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী পরিচালক মুহিবুল আহসান, বার্তা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক অশোক কুমার সিংহ, প্রধান প্রতিবেদক আবুল খায়ের প্রমুখ।
শুভেচ্ছার ঢল
ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরো শুভেচ্ছা জানাতে আসেন চিত্রনায়িকা শাহনূর, পদ্মা ব্যাংকের মিডিয়া কর্মকর্তা সামিনা রোশনি, ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হুমায়ুন কবির, অলিম্পিকের মিডিয়া ম্যানেজার রবিউল হাসান, বসুন্ধরা গ্রুপ, বিকাশ, প্রাণ-আরএফএল, মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের সিনিয়র ম্যানেজার অজিত সুরেকা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, অ্যাকশন এইড, নারীপক্ষ, কর্মজীবী নারী, রক্সি পেইন্টসের মার্কেটিং ম্যানেজার সাইফুল্লাহ মামুদ দুলাল ও ম্যানেজার (ইন্টারনাল অডিট) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোম্পানি, ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ হকার্স কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ।
আরো শুভেচ্ছা জানান ডিইউজে ইত্তেফাক ইউনিট চিফ আবুল খায়ের, ডেপুটি চিফ মোহাম্মদ শাহযাদা, ইত্তেফাক (এনএনপিপি) ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সভাপতি মো. তাজাম্মেল হক, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি গোলাম আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর, বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন খান, সহ-সভাপতি মো. আতাউর রহমান, প্রচার সম্পাদক মো. মোমিনুল হক, সিনিয়র সদস্য গোলাম সরওয়ার আজাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।