সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপের যাত্রা আজ
অনলাইন ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে সাত দফা দাবি তুলে তা নিয়ে নতুন করে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি রয়েছে, যা সংবিধানসম্মন নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছিল।
এর মধ্যে গত রবিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য সংবলিত চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এরপর সোমবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সংলাপ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ।
কাদেরের বক্তব্যের পরদিন মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছে দেন আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। চিঠিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংলাপে বসতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়ে বিকালে সংলাপে বসতে ১৬ নেতার নাম চূড়ান্ত করে ঐক্যফ্রন্ট। এর নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল। তার ঐক্যফ্রন্টকে মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সংলাপে অংশ নিতে ২১ জনকে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংলাপে ক্ষমতাসীন দলটির ১৭ জন ছাড়াও শরিক ১৪ দলের চার নেতা থাকবেন।
গণমাধ্যমে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী সংলাপে শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে থাকবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ।
১৪ দলের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে থাকবেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের একাংশের হসানুল হক ইনু ও অপর অংশের মঈনুদ্দিন খান বাদল এবং সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার চূড়ান্ত করা তালিকা অনুযায়ী ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কামাল হোসেন ছাড়াও থাকবেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস; নাগরিক ঐক্য থেকে থাকবেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও এসএম আকরাম; গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী; জেএসডি থেকে যাবেন আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল মালেক রতন, তানিয়া রব; ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে যাবেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন। পাশাপাশি যাবেন ব্যক্তি হিসেবে এই ঐক্যে যোগ দেয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরীও।
নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই সংলাপে দৃষ্টি রয়েছে পুরো জাতির। সংলাপের উদ্যোগকে বিভিন্ন মহল স্বাগত জানালেও সফলতা নিয়ে অনেকে রয়েছে সংশয়ে।
আশা-নিরাশার দোলাচলেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, সংলাপ যদি লোক দেখানো হয়, তাহলে তারা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগোবেন।
অন্যদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দেয়া সংলাপের দাওয়াতনামায় সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। এতে সরকারি দলের মনোভাবও ফুটে উঠেছে। তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো আলোচনায় আগ্রহী নন বলেই জানা গেছে। তারপরও বহু প্রত্যাশিত সংলাপের টেবিলে ভালো কিছু হতে পারে এমন আশায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।