সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বুধবার
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের দু’দিনব্যাপী নির্বাচন বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে ওই রাতেই (বৃহস্পতিবার) ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যেই ভোটগ্রহণের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের জন্য বুথ করা হয়েছে আইনজীবী ভবনের শহীদ শফিউর রহমান অডিটরিয়ামে।
এদিকে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. ইউনুস আলী আকন্দ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উভয় প্যানেলের আইনজীবীরা। আইনজীবীদের রুমে রুমে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনে সভাপতি সম্পাদকসহ ১৪টি পদে মোট ৩৩ জন করছেন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নির্দলীয় হলেও বরাবরের মতো এবারো সরকার ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দুটি আলাদা প্যানেল করছে। মূলত এ দুটি প্যানেলের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ দুটি প্যানেল ছাড়াও বিভিন্ন পদে আরও পাঁচজন আইনজীবী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। সুপ্রিমকোর্টের সুপারিনটেনডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাশ বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। মাঝে আধাঘণ্টার বিরতি থাকবে। এবারের নির্বাচনে ৬ হাজার ১৫২ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
তিনি বলেন, গত ১ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ ও দাখিল এবং ১৪ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ছিল। ২১ ও ২২ মার্চ দুই দিন ভোটগ্রহণ হবে।
নির্বাচনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সভাপতি এবং শেখ মোহাম্মদ মোরশেদকে সম্পাদক করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অপরদিকে বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল নামে আরেকটি একটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ
সরকার সমর্থক প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, সহসভাপতি আলহাজ আলালউদ্দীন ও ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান, ট্রেজারার ড. মোহাম্মদ ইকবাল করিম, সহসম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও ইয়াদিয়া জামান, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, হুমায়ুন কবির, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, শাহানা পারভীন, রুহুল আমিন তুহিন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মোহাম্মদ মুজিবর রহমান সম্রাট।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সভাপতি ও বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সম্পাদক, সহসভাপতি ড. মো: গোলাম রহমান ভুইয়া, এম গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহসম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, আনজুমানারা বেগম, সদস্য ব্যারিস্টার সাইফুর আলম মাহমুদ, মো. জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, মো. এমদাদুল হক, মাহফুজ বিন ইউসুফ, সৈয়দা শাহীনারা লাইলী, মো. আহসান উল্লাহ ও মোহাম্মদ মেহদী হাসান।
এছাড়া আরো পাঁচজন বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হচ্ছেন, সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ ও শাহ খসরুজ্জামান, সহসভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সম্পাদক পদে আলহাজ মোহাম্মদ আবুল বাসার, ও সদস্য পদে তাপস কুমার দাস।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সাদা প্যানেল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের মধ্যে হবে। এ দুটি প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ সেশনের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল)।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) পেয়েছিল ৬টি পদ।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কাজ করছে। বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবীদের সব উন্নয়নে আমি অতীতেও কাজ করেছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকব। এ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচার বিভাগ তলানিতে পৌঁছেছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে নজিরবিহীনভাবে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে কোনো বিচারক কাজ করতে পারছেন না। উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে সর্বত্র এখনো এসকে সিনহা ভীতি কাজ করছে। এজন্য বিচারকদের সাহস জোগানোর প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, অতীতে বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও কাজ করার চেষ্টা করব। সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবীদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব।
এদিকে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. ইউনুস আলী আকন্দ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, গত সোমবার সুপ্রিমকোর্টে প্রার্থী পরিচিতি সভায় তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। তালিকায় এক নম্বরে থাকলেও বক্তৃতায় সুযোগ দেয়া হয়েছে সবার শেষে। বক্তৃতার সময় সবাই আসন ছেড়ে চলে গেছেন। সভাপতি প্রার্থী অন্যদের মঞ্চে বসার ব্যবস্থা করলেও তাকে বসার জায়গা দেয়া হয়েছে দর্শকসারিতে।