আগামীতেও বৃহত্তর পরিসরে বইমেলা আয়োজনে সহযোগিতা চাইলেন মেয়র
২৩ফেব্রুয়ারী,শনিবার,অনলাইন ডেক্স,নিউজ একাত্তর ডট কম: ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবী, সাংবাদিকতাসহ চৌদ্দটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য চট্টগ্রামের চৌদ্দ গুণী ব্যক্তিকে একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও একুশে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন । গত বৃহস্পতিবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামস্থ জিমনেসিয়াম চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ও সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সহযোগিতায় বইমেলা মঞ্চে সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন। অমর একুশে বই মেলা চট্টগ্রাম-২০১৯ এর আহবায়ক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউকের সভাপতিত্বে সভায় চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী,চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন। সংবর্ধিত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরিন আখতার, প্রকৌশলী আলী আশরাফ, সাফিয়া গাজী রহমান, মানজুর মুহাম্মদ, মোস্তফা কামাল, মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, মরহুম আইয়ুব বাচ্চুর পিতা হাজী মোহাম্মদ ইসহাক, দবির আহমদ চৌধুরীর এর পুত্র আবদুর রহমান চৌধুরী অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা এ আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে আরো বৃহত্তর পরিসরে আয়োজনে তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বই মেলা মঞ্চে সংবর্ধিত গুণীজন,চসিক কাউন্সিলর,সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন- নগরীর গুণীজনদের সংবর্ধনা প্রদান ও তাদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে হাজারো গুণীজন সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মেয়র বলেন- যেসব দেশের প্রধান ভাষা একাধিক, সেখানে কোনো একটি ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণা করা মানে সেই ভাষায় কথা বলা মানুষকে অন্যদের চেয়ে বেশী সুযোগ প্রদান করা, অন্য ভাষার মানুষের উপর কর্তৃত্ব করাতে রাস্ট্রীয় সমর্থন যোগানো। এর ফলে একাধিক ভাষাভাষির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এ প্রসংগে মেয়র বলেন- ভাষা রাজনীতি যে জাতি ও রাষ্ট্রকে বিভক্ত করতে পারে উর্দু নিয়ে তৎকালিন পাকিস্তানী রাজনীতির একটি উজ্জল উদাহরণ। তাই আমাদের উপর উর্র্দূ চাপিয়ে দেয়ার পরিণতি ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা। বই মেলা আয়োজনের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন অতীতে চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে একাধিক বই মেলা আয়োজনের কারণে এখানে কোনো বই মেলাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ ও পাঠক সমাজ দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল চট্টগ্রামে ঢাকার আদলে একক বই মেলার আয়োজন করার। এই বাস্তবতা উপলব্ধি থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ও সম্মিলিত বই মেলা আয়োজনের জন্য আমি বিভিন্নভাবে প্রকাশক, নাগরিক সমাজ, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষক, গবেষক ও সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের সাথে আলোচনা করি। তাই এবারের আয়োজন ভিন্ন আঙ্গিকে হওয়ায় প্রাথমিকভাবে আমরা সফল হয়েছি। জিমনেসিয়ামের সামনের রাস্তাসহ সম্প্রসারণ করে আরো বৃহত্তর পরিসরে, কলবরে আগামী বছরও ১০ ফেব্রুয়ারি এই মঞ্চে ১৯ দিনব্যাপী এই বই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এইজন্য তিনি চট্টগ্রামের সকল নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস। এই ভাষা আমার মায়ের এবং আমার মুখের ভাষা। এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। এই ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি ও সমৃদ্ধ করার জন্য বেশি বেশি লেখনির উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন লেখনির মাধ্যমে এই ভাষা যতই সমৃদ্ধ হবে, ততই দেশ ও জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে অধিকতর সমাদৃত হবে। আমারা সমৃদ্ধ ও মানসম্মত লেখার বই চাই। যে লেখায় পাঠকের মনের চাহিদা পূরণ করবে। তিনি বলেন- ৭১ -এ বঙ্গবন্ধুর আহবানে আমরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়। অনুরূপভাবে আমরা আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি।
এর আগে চট্টগ্রামের ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবীদের সম্মাননা প্রদানের জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৪জনের নাম ঘোষণা করে। এর মধ্যে একুশে সম্মাননা পদক পেয়েছেন ১০ গুণী ব্যক্তি এবং সাহিত্য ক্ষেত্রে পেয়েছেন ৪জন । এবার চসিক কর্তৃক পদকপ্রাপ্তরা হলেন- ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, কবি, লেখকও রয়েছেন। এ একুশে স্মারক সম্মাননা পাওয়া চৌদ্দ জনের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে দবির আহমদ চৌধুরী(মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধে (মরণোত্তর) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ আবদুর রব (মরণোত্তর), সঙ্গীতে আইয়ুব বাচ্চু (মরণোত্তর) এর পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন । এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডা. এস এম কামাল উদ্দীন, ক্রীড়ায় কামাল উদ্দীন আহমেদ, শিক্ষায় প্রফেসর (প্রকৌশলী) আলী আশরাফ, সমাজ সেবায় সাফিয়া গাজী রহমান, সংগঠক হিসেবে মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, সাংবাদিকতায় মোস্তফা কামাল পাশা, সাহিত্যে গবেষণায় পুরস্কার পেয়েছেন ড.শিরীণ আখতার, কথাসাহিত্যে দেবাশীষ ভট্টচার্য্য, শিশু সাহিত্যে মানজুর মুহাম্মদ ও কবিতায় খালেদ হামিদী। তারা নিজেরাই মেয়রের নিকট থেকে ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন।
মহান একুশে উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ১ মিনিটে নগর ভবনস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামশুদ্দোহা, ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়াসহ বিভাগীয় শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চসিক শ্রমিক-কর্মচারী লীগ(সিবিএ)এবং ওয়ার্ড সচিব ফোরাম নেতৃবৃন্দ নগর ভবন চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।