আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার থাকবে :চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার
বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসতে পারে। নির্বাচন বানচাল, ভোট কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাধা প্রদান, নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়া, নির্বাচনের দিন অথবা আগে ও পরে দেশে যে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে মাস্টারপ্ল্যান আছে - এমন সংবাদ শোনা যাচ্ছে। সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান আরো বৃদ্ধিকরণসহ এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরো জোরদার করতে হবে। নির্বাচনে যে কোন অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ, র;্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভোট কেন্দ্র ও আশপাশে সতর্কাবস্থানে থাকবে এবং তারা টহল জোরদার করবে। সেনাবাহিনী নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান নেবে ও প্রয়োজনে নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আমরা যাতে কোন ধরনের বিতর্কে না জড়ায় সে বিষয়টা দেখতে হবে। নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যখন যেখানে যা প্রয়োজন তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন। আর কয়েকদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি ফোন করে হত্যার ও হুমকি দিচ্ছে। আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। প্রতিটি মুভমেন্টে রিটার্নিং অফিসারগণ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকতে চায়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও নির্বাচনের রিটানিং অফিসারের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং বিভাগের অন্যান্য জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজির উপর বর্তায়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
আজ ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ইং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস এই সভাগুলোর আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ দেশে যাতে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে জন্য চলতি মাস থেকে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সড়ক, নৌপথ ও সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদকের সাথে অস্ত্রের চালান আসতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনাও বৃদ্ধি পেতে পারে। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য ও নজরদারি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে মানুষ যাতে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অস্ত্র, চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট কার্যক্রম আরো জোরদারের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের অভিযান বৃদ্ধি করতে হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন অগ্রাধিকার বিধায় রিটার্নিং অফিসারদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। আশাকরি সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ৫৯৭টি ভোট কেন্দ্রে ১৯ লক্ষ ২০ হাজার ভোটার রয়েছে। রিটার্নিং অফিসারকে হুমকি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে সিএমপি কমিশনারের সাথে কথা বলে আজ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরীতে কোন ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছি না। এরপরও সিএমপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠিত পৃথক সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান, বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আদিল চৌধুরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, বিজিবি বান্দরবানের উপ-মহাপরিচালক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জহিরুল হক খান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক সামছুল আলম, র;্যাব-৭ পরিচালক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন ও কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মেহেদী, এনএসআইর উপ-পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ড. মো. গোফরান ফারুকী, ফেনী জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দেবময় দেওয়ান, নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. মাসুদ হোসেন, কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শফি কামাল, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদ হোসেন সিদ্দিক, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী মো. চাহেল তস্তুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ বনসংরক্ষক জিএম মো. কবির, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, জেলা পিপি একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বৃহত্তর পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন প্রমুখ।
বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকারিয়া। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।প্রেস বিজ্ঞপ্তি