ডেকে নিয়ে ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুতে ফেললো পার্টনাররা
অনলাইন ডেস্ক: পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে মোহাম্মদ সাঈদ হোসেন (৪০) নামের এক শেয়ার বাজার ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুতে ফেলে ব্যবসায়িক পার্টনাররা। নয়দিন আগে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটলেও পুলিশ লাশের সন্ধান পেয়েছে বুধবার দিনগত রাত ১১টার দিকে। চট্টগ্রাম মহানগরের ইপিজেড থানার নিউমুরিং বোবা কলোনীর বড়মাঝি প্রকাশ মাসকট প্রবাসি জসিম উদ্দীনের সাততলা ভবনের পাশের পরিত্যক্ত জমি থেকে ওই অর্ধগলিত লাশটি উত্তোলন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়ুয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যার শিকার সাঈদের ব্যবসায়িক পার্টনার এরফান উদ্দিন কবির ও আরমান কবির নামের দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওসি আরো বলেন, নিহত সাঈদ নগরের গোসাইল ডাঙা এলাকার আজিজ মিয়ার বাড়ির আজমল হোসাইনের ছেলে। স্ত্রী ফরিদা আকতারকে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশী থানার লালখান বাজারের হিলসাইড আবাসিক এলাকার দি ম্যাগনেফিসেন্ট বিটিআইয়ে ফ্ল্যাটে থাকতেন।
ওসি উৎপল বড়ুয়া আরো বলেন, লাশ উদ্ধার করে রাতেই মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরকেও গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
নিহতের স্ত্রী ফরিদা আক্তার জানান, পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে পার্টনাররা বাসা থেকে ডেকে নেয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে।
ফরিদার ধারণা সে রাতেই সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ঘটনার পর পর তিনি কিছু পরিচিত ও স্বজনকে নিয়ে সেই ভবনে যান এবং সাঈদের ব্যবসায়ীক পার্টনারকে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু তারা প্রথমে কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও পরে বলেন- সাঈদকে পাওনা টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। আর সেই টাকা নিয়ে ফেরার পথে ভবন থেকে বের হতেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েছেন। ওই সময় ওই সন্ত্রাসীরা সাঈদকে ধাওয়া করে নিয়ে গেছে। এরপর আর কিছুই জানেন না তারা।
ফরিদা আকতার বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর এরফান ও আরমান পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে সাঈদকে পতেঙ্গা নিউমুরিং বোবা কলোনীর জসিম বিল্ডিংয়ের সেই ভবনে যেতে বলেন।
ফরিদার ভাষ্য অনুযায়ী, সাঈদ সেই দিন পূর্বপরিচিত সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক হেলাল উদ্দিনকে ডাকেন সেই জসিম বিল্ডিংয়ে যেতে। তবে হেলাল দূরে থাকার কারণে তার আরেক পরিচিত চালক মাঈন উদ্দিনকে পাঠান সাঈদের লালখান বাজারের বাসায়। সেখান থেকে সেই অটোরিকশা চালক মাঈন উদ্দিন সাঈদকে নিয়ে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে নিউমুরিংয়ের সেই জসিম বিল্ডিংয়ে যান। সেখান চালক মাঈন উদ্দিনকে বাসার সামনে রাস্তায় দাঁড় করে রেখে সাঈদ একাই সেই বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং রাত আটটার দিকে স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে সেখানে পৌঁছানোর কথা মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেন।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা পরও সাঈদ ওই ভবন থেকে বের না হওয়ায় অস্থির হয়ে পড়েন সাঈদকে বহন করে নিয়ে যাওয়া সেই চালক মাঈন উদ্দিন। এরপর সাঈদের পরিচিত সেই চালক হেলালকে মোবাইল ফোনে মাঈন উদ্দিন তার উদ্বেগের কথা জানান। সেই সময় থেকে হেলাল সাঈদের মোবাইলে বার বার ফোন করে মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিলেন।
পরে হেলাল ফরিদা আক্তারকে জানালে ফরিদা আক্তারও মোবাইলে কল করা শুরু করেন। তিনি মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বাসার কর্মচারী রুবেল দত্ত ও চালক হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে রাত ১২টার দিকে সেই নিউমুরিং ভবনে যান ফরিদা। সেখানে গিয়ে এরফান ও আরমানকে সাঈদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে তারা বলেন, সাঈদ আসেনি।
পরে সিএনজিও চালক মাঈন উদ্দিন ও জসিম বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার সাঈদ বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতে দেখেছেন তবে বের হতে দেখেননি এমন সাক্ষি দেয়ার পর এরফান ও আরমান কোনো সদুত্তর দিতে পারছিলেন না।
পরে তারা বলেন, পাওনা টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা দেয়ার পর সাঈদ রাত আটটা বিশ মিনিটের দিকে সেই ভবন থেকে বেড়িয়ে গেছে, তবে বিল্ডিংয়ের নিচে নামার সাথে সাথে ৩ থেকে ৪ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে নিয়ে গেছে। তাদের এমন অসংলগ্ন কথাবাত্রায় পর তারা সেখান তেকে বেড়িয়ে যান।
পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর সাঈদ ওই ভবনে পাওনা টাকার জন্য গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে পতেঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
ফরিদা আক্তার আরও জানান, সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ এরফান ও আরামানকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু তারা কোনো ভাবেই সাঈদের অবস্থান স্বীকার করেননি।
থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কারণে উল্টো ফরিদাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় তারা দু’ভাই।
এ ঘটনার পর ২৫ সেপ্টেম্বর ওই জিডির সূত্রে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সাঈদের স্ত্রী ফরিদা আক্তার। সেই মামলায় আসামী করা হয়, এরফান উদ্দিন কবির (২৬), আরমান কবির (২৪), সুরাইয়া বেগম হিনা (২৩), নাজমুন নাহার (৪৫), মোহাম্মদ জিকু (২২) ও পিয়া আকতারকে (১৮)।
জানাগেছে, মামলার আসামী সুরাইয়া বেগম হিনা ও পিয়া আকতার সম্পর্কে ফরিদা আক্তারের চাচাতো বোন। আর এরফান উদ্দিন কবির সুরাইয়ার স্বামী এবং জিকু প্রিয়া আকতারের স্বামী। নাজমুন নাহার ওই প্রবাসি জসিম ভবনের মালিক জসিমের স্ত্রী এবং এরফান ও আরমানের বড় বোন।
তবে ভগ্নিপতি জসিম মাসকটে থাকার কারণে এরফান ও আরমান বড় বোন নাজমুন নাহারের সাথেই থাকেন। আর সেই জসিম ভবনের নিচ তলায় ব্যবসায়ীক অফিস তৈরি করেছেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এরফান সম্পর্কে চাচাতো বোনের স্বামী ও আরমান তার ভাই হওয়ার কারণে এবং আত্মীয়তার সুবাধে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে শেয়ার ব্যবসা করার জন্য প্রথমে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন। আর ওই টাকা জসিমের স্ত্রী নাজমুন নাহারের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমেই নিয়েছেন তিনি।
পরে ব্যবসা আরো বৃদ্ধি করবে বলে টাকা চাইলে এরফানকে নাজমুন নাহারের একাউন্টের মাধ্যমে আরো ৮ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
এরপর সাঈদের কাছ থেকে ব্যবহারের কথা বলে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে একটি মটরবাইক কিনেন এরফান। এদিকে আত্মীয়তার সুবাধে জিকু ও তার স্ত্রী পিয়া আকতার ব্যবসা করার কথা বলে ৮ লক্ষ টাকা ধার নেয় সাঈদের কাছ থেকে।
পরে ওই টাকা ফেরত চাইলে তারা টাকা না দিয়ে ছলচাতুরী শুরু করে। এরপর টাকা না দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে ডেকে নিয়ে হত্যা করে বলে ফরিদা আক্তার অভিযোগ করেন।
এদিকে ব্যবসায়ী সাঈদের লাশ উদ্ধারের আগেই ওই জসিম ভবনের জসিমের স্ত্রী নাজমুন নাহার, সুরাইয়া বেগম হিনা, জিকু ও প্রিয়া বাড়ি ফেলে আত্মগোপনে চলে গেছে। পরিবর্তন