যে ১০ জেলা ভাসছে বন্যায়
১৩জুলাই২০১৯,শনিবার,স্টাফ রিপোর্টার,নিউজ একাত্তর ডট কম: বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ১০ জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টায় আরও অন্তত ৩টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হতে পারে। বৃষ্টির বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বানের পানি আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে। সিকিম-আসামে ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা এবং ব্রহ্মপূত্র-যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলসহ নেপাল এবং ভারতের বিহারে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এই বৃষ্টি চলতে থাকলে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি প্রবাহ বেড়ে যাবে। এদিকে আসাম-মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ওই এলাকার বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসছে মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদীতে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এসব মিলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, নেত্রকোণা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টায় জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জে বন্যা বিস্তৃত হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি মাঝারি ধরনের বন্যা চলছে। ইতিমধ্যে মেঘনা এবং ব্রহ্মপূত্র অববাহিকা সক্রিয় হয়েছে। সাধারণত এই দুই অববাহিকা একসঙ্গে সক্রিয় হলে ২৪-২৫টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় বন্যা হয় উল্লিখিত দুই অববাহিকার সঙ্গে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকা সক্রিয় হলে। যদিও ভারতের বিহারে এবং নেপালে বন্যা হচ্ছে। এর কারণে গঙ্গায় পানি বাড়ছে। পদ্মায়ও প্রবাহ বাড়বে। কিন্তু এই বন্যার পানি বাংলাদেশকে আক্রান্ত কতটা করবে সেটার জন্য আরও দুই-আড়াই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। যদি গঙ্গা-পদ্মায়ও বন্যা হয় তাহলে বাংলাদেশে বড় বন্যা হতে পারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত তেমন আশঙ্কা দেখছি না। গত ৯ জুলাই থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেটি চারদিন ধরে অব্যাহত আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ভেতরেও মৌসুম সক্রিয় থাকায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে প্রথম দিকে দেশের নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চল হয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব এলাকার ৭ নদী ১০টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার এসব নদী আরও নতুন নতুন এলাকায় বিপদসীমা পার করে প্রবাহিত হতে থাকে। শুক্রবার নতুন করে কুশিয়ারা বিপৎসীমা পার করে তিনটি স্থানে। সুরমাও তিনটি স্থানে বিপদসীমা পার করে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, সাঙ্গু ও তিস্তা বই বিপদসীমার উপরে। এদিন অবশ্য দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলার নদীগুলো বিপদসীমার নীচে চলে আসে। কিন্তু ফেণী, হালদা, মাতামুহুরী যে কোনো সময়ে বিপদসীমা পার করতে পারে। যমুনা ও ধরলার পানিও দ্রুত বাড়ছে।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দায়িত্বরত সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং ভারতের সিকিম, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতিমধ্যে যমুনা নদীর জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমা পার করেছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা, কুড়িগ্রামে ধরলা কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিপদসীমা পার করতে পারে।